শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

নিঝুম ।। ইয়াসমিন

নিঝুম ইয়াসমিন নিঝুম আজ ভীষণ ব্যস্ততা ।অফিসে আজ অনেক কাজ ।কোম্পানি একটা নতুন পণ্য বাজারে আনবে ।পণ্যটার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চলছে নানা রকম কাজ ।আজকে একটা কনসার্ট আছে কোম্পানির পক্ষ থেকে তার আয়োজনের জন্য রাত পর কাজ করতে হয়েছে । আজকে কনসার্ট তাই চাপ একটু বেশি ।কনসার্টে আসছে নামকরা সিনেমা অভিনেতা আকাশ ।ঐ দিকে অভি মানে নিঝুমের প্রেমিক বার বার ফোন দিচ্ছে ।কিন্তু এত কাজের চাপ যে ফোন ধরার সময়টুকু নেই ।নিঝুম ভাবছে অভিকে পরে বুঝিয়ে বলা যাবে ।একটু রাগ করবে কিন্তু অভি আমাকে বোঝে ও সবটা শুনলে নিশ্চয়ই আর রেগে থাকবে না । কনসার্টটা ভালো ভাবে শেষ হলে বসকে বলে কয়েকটা দিন ছুটি নিতে হবে । চারদিকে শুধু আকাশ, আকাশ ।সত্যি আকাশ জনপ্রিয়তা অনেক পণ্যটার প্রচার ভালো হবে মনে হচ্ছে ।। কনসার্টের এক ফাঁকে আকাশ আর নিঝুমের কথা হয় ।আকাশ যেন অন্যরকম ভাবে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে ছিল অনুষ্ঠানের কিছু দিন পর নিঝুম অফিসের একটা প্রয়োজনে আকাশের বাড়িতে যায় । আকাশ - আচ্ছা আপনার নাম যেন কি ? নিঝুম- জি ,আমি নিঝুম । আকাশ - জানেন সেদিন আপনাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । নিঝুম- সেকি কেন ? আকাশ- আসলে আমার এক বোন ছিল ঠিক আপনার মত ।সেদিন আপনাকে দেখে তাঁর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল । নিঝুম- ছিল মানে ? আকাশ - কয়েক বছর আগে মারা যান । সেদিন আকাশের মুখটা দেখে নিঝুমের খুব খারাপ লাগে ।ধীরে ধীরে আকাশ আর নিঝুমের বন্ধুত্ব হয় নিঝুম অভিকে আকাশের কথা বলে ।অভি নিঝুমকে বলে, তুমি আবার আকাশকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো ? নিঝুম মজা করে বলে, ভাবতে হবে ।নিঝুম কথাটা বলে হেসে ফেলে। আকাশের মা নিঝুমকে নিজের মেয়ে মত ভালোবাসে ।আকাশ ভাবে নিঝুম আসলেই অসাধারণ ,মা নিঝুমকে পেয়ে আপুর শোকটা অনেকটা ভুলতে পারছে । একদিন আকাশ নিঝুমকে বলে আকাশ- নিঝুম অভিনয় করবি ? নিঝুম- অভিনয়......!!!! আর আমি, তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে । আকাশ- আমি সত্যি বলছি ,তুই পারবি ।তুই শুধু হ্যা বল বাকিটা আমি দেখছি । নিঝুম- অভি কে বলি ,ও যদি হ্যা বলে তাহলে করতে পারি । আকাশ- তোর অভি কে আমি রাজি করাবো। অভি রাজি হয় তবে নিঝুম বলে শুধু একটা ছবিতে অভিনয় করবে ।অভিনয়ের প্রতি ওর আগ্রহ নেই শুধু আকাশের কথাতেই ও রাজি হয়েছে ।নিঝুম আকাশের সাথে অভিনয় করে ।হঠাৎ একবারে নতুন মুখ আসায় সিনে পাড়ায় আলোচনার ঝড় বইতে শুধু করে । খবরের কাগজে নানা ধরণের লিখালেখি হয় আকাশ আর নিঝুমের ব্যাপারে । সিনেমাটা সফলতা পায় কিন্তু নিঝুমের জীবনে হঠাৎ অনেক কিছু বদলে যায় ।আজকাল অভি যেন কেমন অচেনা হয়ে গেছে ।নিঝুম অভিকে হারানো ভয় পায়।অভিকে বিয়ের কথা বলে কিন্তু অমি বলে ওদের বাড়িতে ওকে মেনে নেবে না । কারণ ও সিনেমায় অভিনয় করেছে আর যেসব মেয়ে অভিনয় করে তাদের চরিত্র ভালো হয় না । অভির কথা শুনে নিঝুম চুপ করে থাকে ।নিঝুম ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় ।আকাশে কে ফোন করে বলে নিঝুম- আকাশ জীবনে কিছুই চাই নি। তবে অনেক পেয়েছি তাই বুঝি আজকে সব হারাতে হলো রে । আকাশ- হঠাৎ এমন কথা বলছিস কেন ? নিঝুম- এমনি তুই বুঝবি না । পরের দিন আকাশের বাড়িতে খবর যায় নিঝুম আর বেঁচে নেই । নিঝুম আত্মহত্যা করেছে এটা আকাশ কিছুতেই বিশ্বাস করছে পারছে না ,মেনে নিতে পারছে না নিঝুমের চলে যাওয়াটা ।আকাশ ভাবছে নিঝুম আর ওর বন্ধুত্ব কি এতই হালকা যে নিঝুম নিজেকে শেষ করে দিল কিন্তু একটিবার দুঃখটা ওর সাথে শেয়ার করতে পারলো না । নিঝুমের আত্মহত্যার বিষয়টি বেশ আলোচিত হলে ।নিঝুম মৃত্যুর আগে লিখে গেছে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় ,তার মৃত্যুর কারণটা নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি করা না হয়। নিঝুমের মৃত্যু পর নিঝুমের বাড়ির কাজের লোক করিম আসে আকাশের কাছে । আকাশ- কি ব্যাপার তুমি এখানে ? করিম- স্যার, আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিল । আকাশ- কি ? করিম -(একটি খাম বের করে ) আপা এটা আপনাকে দিতে বলেছিল আর বলেছিল আপনি ছাড়া যেন এটা আর কাউকে না দেই, এটা শুধু আপনার জন্য । আকাশ চিঠিটা নিল ।হঠাৎ যেন বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো ।চিঠিটা আকাশের কাছে লেখা নিঝুমের শেষ চিঠি। প্রিয় আকাশ, তুই যখন এটা পড়বি তখন আমি তোর থেকে ,এই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে গেছি ।জানি না , মৃত্যুর পর মানুষ কাউকে মিস করতে পারে কি না, যদি পারে তাহলে তোকে খুব মিস করবো ।জানিস, আকাশ আমি অভিকে খুব ভালোবাসি । কিন্তু আজ আমার চেনা অভিকে বড় অচেনা লাগলো ।যে ছেলে আমার একটু অভিমান হলে আমার অভিমান ভাঙ্গার জন্য হাজার হাজার উপায় বের করতো ।সেই ছেলে আজ আমাকে এত কষ্ট দিল ।সে আমাকে চরিত্রহীনা ভাবছে ।আমাকে সন্দেহ করছে । ও ভালো করেই জানে আমি ওকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না ।অভিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না রে, তাছাড়া এত অপমান নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না ।তাই আমার চলে যাওয়াই ভালো ।অভির কোন ক্ষতি হতে দিস না ।আমি ওকে বড্ড ভালোবাসি রে । চিঠিটা পড়ে আকাশ কি করবে কিছুই বুঝতে পারে না । আকাশের মনের মধ্যে ঝড় শুরু হয়। নিঝুমের কথা রাখবে না অভিকে শাস্তি দিবে । কিছুদিন পর আকাশের সাথে দেখা করতে একটি লোক আসে ।লোকটি আর কেউ নয় অভি । আকাশ-এখানে কি চাই আপনার ? অভি- আমি জানি ,তুমি আমি আমাকে ঘৃণা কর । আকাশ - সেটা কি স্বাভাবিক নয় ? আকাশ লক্ষ করে অভি কেমন যেন হয়ে গেছে ।ঝড় বয়ে যাওয়া পর যেমন অবস্থা হয় ঠিক তেমন । অভি- আকাশ ,আমি নিঝুমকে খুব ভালোবাসি । আকাশ- লজ্জা করে না তোমার ? তুমি এ কথা বলছো । অভি- আমি চেয়েছিলাম ও সুখী হোক । আকাশ- তুমি ওকে ভালোবাসতে ,ওকে সুখী দেখতে চেয়েছিলে তাহলে অপমান করলে কেন ? কেউ জানুক আর না জানুক আমি জানি নিঝুমের মৃত্যু তুমি দায়ী । অভি - (অভি ধরা গলায় বলে )আমার ব্লাড ক্যান্সার ।নিঝুমকে অপমান করছিলাম কারণ আমি চেয়েছিলাম ও আমি ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করুক কিন্তু নিঝুম....... অভি আর কিছু বলতে পারে না শুধু বাতাসে ভেসে যায় তার কান্ন শব্দ আর আকাশ ভাবে নিঝুমের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী ভাবতে ভাবতে দুচোখ বেয়ে পড়ে পানি । .................................................................................................................................... ইয়াসমিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন