রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯
এপ্রিল ও একটি কলংকিত ইতিহাস
পহেলা এপ্রিল । পশ্চিমা দেশ গুলোতে এ দিনটি পালন করা হয় মানুষকে বোকা বানানোর দিন বা এপ্রিল ফুল হিসেবে। এ দিন মিথ্যা বলে, ধোঁকা কিংবা কষ্ট দিয়ে এবং প্রতারণা করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় । দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাশ্চাত্যের কায়দায় মুসলিম দেশ গুলোতে ও প্রতিবছর কিছু লোক এপ্রিল ফুল ডে পালন করে যাচ্ছে।
এপ্রিল ফুল মানে হচ্ছে, এপ্রিলের বোকা। কিন্তু কারা ছিল এপ্রিলের বোকা?
.
স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান সম্রাট ফার্ডিনান্ড কে বিয়ে করে ৷ বিয়ের পর দু’জন মিলে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলে স্পেন আক্রমণের। ১৪৯২ সালে স্পেনে মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। এর আগেই রাজা ফার্ডিনান্ড মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভা সহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয়। বাকি ছিল শুধু গ্রানাডা। গ্রানাডার শাসনকর্তা ছিলেন হাসান। খ্রিস্টানরা তার উপর চাপ সৃষ্টি করছিল, আত্মসমর্পনের জন্য। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। তাকে আত্মসমর্পনে রাজি করাতে না পেরে খ্রিস্টানরা তার পুত্র আবু আবদুল্লাহকে সিংহাসনে বসানোর লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলে। আবদুল্লাহ তাদের কথায় রাজি হয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং এক সময় বাদশাহ হাসান পুত্রের সাথে যুদ্ধ করার গ্লানি এড়ানোর জন্য তার এক ভাইয়ের হাতে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে দেশান্তরী হন।
.
আবু আব্দুল্লাহ বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তার সেনাপতি মহাবীর মুসাসহ অনেক মুসলমান ফার্ডিনান্ড বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধচালিয়ে যেতে থাকে। এর আগে কখনো সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারেনি বলে চতুর ফার্ডিনান্ড এবারপা বাড়ায় ভিন্ন পথে ৷ তার নির্দেশে আশ পাশের সব শস্য খামার জ্বালিয়ে দেয়া হয় ৷ অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে ৷ দুর্ভিক্ষ যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন প্রতারক ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করে, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে ৷সেদিন ছিল ""১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল"" ৷
.
গ্রানাডাবাসী অসহায় নারী ও মাসুম বাচ্চাদের করুণ মুখের দিয়ে তাকিয়ে খ্রিষ্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক ৷ সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেয় আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে ৷ শহরে প্রবেশ করে খ্রিষ্টান বাহিনী মুসলমানদেরকে মসজিদের ভেতর আটকে রেখে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয় ৷ এরপর এক যোগে শহরের সমস্ত মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে হায়ে নারা ৷
.
সেদিন লক্ষ লক্ষ নারী,পুরুষ ও শিশু অসহায় আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত পুড়ে মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারায় মসজিদের ভেতর ৷ অসহায় মুসলমানদের আর্তচিৎকার যখন গ্রানাডার আকাশ-বাতাস ভারী করে তোলে- তখন রাণী ইসাবেলা হেসে বলতে লাগলো, ‘হায় এপ্রিলের বোকা ! শত্রুর আশ্বাস কেউ কি বিশ্বাস করে?’ সেই থেকে খ্রিষ্টান জগত প্রতি বছর ১লা এপ্রিল আড়ম্বরের সাথে পালন করে আসছে- April Fool মানে ‘এপ্রিলের বোকা’ উৎসব ৷
.
এপ্রিল ফুল ডের এ মর্মান্তিক ইতিহাস জানারও পর কি আমরা এ দিনটিকে আমোদ-প্রমোদ কিংবা আনন্দের দিন হিসেবে পালন করতে পারি? কক্ষনোই না। এ দিনটি আসলে হওয়া উচিত আমাদের শোকের দিন, ইসলামের শত্রুদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দিন। আরেকটা কথা। মানুষকে ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা এসব কিন্তু ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী।
.
১লা এপ্রিলে যেভাবে মিথ্যা বলে রসিকতা করার চেষ্টা করা হয়তা কোন ভাবেই মুসলমানদের সংস্কৃতি হতে পারে না। রাসূলে খোদা বলেছেন, "ধ্বংস তার জন্য- যে লোক হাসানোর জন্য কথা বলে এবং তাতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়"।
.
সুতরাং এপ্রিল ফুলের নামে আমরা কেউই কাউকে প্রতারণা করবো না এবং মিথ্যার আশ্রয় নেবো না-এই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।
.
আল্লাহ আমাদের বুঝার তওফিক দান করুন। #আমিন
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)